বুধবার, ০৪ Jun ২০২৫, ১২:৪২ অপরাহ্ন
মো. শিহাব উদ্দিন গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানে নানা অনিয়ম অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। বুধবার (০৭ মে) সকাল ১০ টা থেকে ১১ টায় পর্যন্ত দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করে দুদকের একটি দল।এসময় সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায়, সোহেলসহ দুদকের আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এ অভিযানে অংশ নেন।
অভিযানকালে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান জানান, সারা দেশে ৩৬ জেলায় একযোগে অভিযানের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিআরটিএ গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। যার প্রেক্ষিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথমে আমরা সাদা পোশাকে অফিসটি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করি। অভিযানে ঘুষ নিয়ে কাজ করা, গ্রাহককে সঠিক তথ্য না দেওয়া, গ্রাহকদের দিনের পর দিন ভোগান্তিতে রাখা, দীর্ঘদিন একই অফিসে কাজ করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন, দালাল চক্রসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিগত ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে মোট ২ হাজার ৮৮৪টি লাইসেন্স-এর আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে আরো ৬৭টি ও বাতিল করে আবেদনকারীকে ফেরত দেয়া হয়েছে ৪৭টি। বাতিল ও অপেক্ষাধীন আবেদনসমূহ যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। বিআরটিএ গোপালগঞ্জ অফিসের পত্র ইস্যু রেজিস্ট্রারে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। পত্র ইস্যু রেজিস্ট্রারে অসংখ্য নম্বর ফাঁকা রাখা হয়েছে যা ভবিষ্যতে ব্যবহার করে দুর্নীতি করার জন্য রাখা হয়েছে।
দুদক কর্মকর্তা আরো বলেন, বিআরটিএ অফিসের অফিস সহকারী লিখন শেখ তিনি ২০২৩ সাল থেকে এখানে কর্মরত রয়েছে। তার বাড়ি নড়াইল জেলায়। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি পরিবারসহ খুলনায় থাকেন, তিনি প্রতিদিন এখান থেকে যাতায়াত করেন। তার খুলনায় বাড়ি রয়েছে, নড়ালে প্রচুর জমি কেনা রয়েছে, গাড়ি আছে এসব তথ্য আমরা পেয়েছি। একজন ছোট কর্মচারী হয়েও কীভাবে খুলনার মত বড় শহরে থাকেন এবং খুলনায় প্রতিদিন যাতায়াত করেন। তার যে আর্থিক সামর্থ্য তার সাথে সামঞ্জস্য নয়। অফিস সহায়ক ইয়াছিন শেখ তার বিরুদ্ধে গত বছর দুদকের গণশুনানীতে অভিযোগ এসেছিল। অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের কমিশনার বদলির জন্য বলেছিলেন, আমরাও চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন এক কারণে তিনি এখনো এই অফিসে বহাল রয়েছেন। গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক পদটিতে বরগুনা জেলার সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি সপ্তাহে ১ দিন অফিস করায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি নিয়মিত অফিসে না থাকার সুবাদে অফিসের কর্মচারীগণ দালালদের সাথে মিশে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে জনভোগান্তি তৈরি করছেন।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ অভিযানে আমরা অনেকগুলো অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের কাছে সুপারিশ দিয়েছি এবং আমরা দুদকের প্রধান কায্যালয় থেকে বিআরটিএ’র প্রধান অফিসে সুপারিশগুলো দিবো। যাতে এই সমস্যাগুলো দূর করে জনগণকে সেবা প্রদান করা যায় এবং বিআরটিএ থেকে সেবা পেতে পারে। এছাড়াও এই অফিস দালাল মুক্ত করা হবে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যাপক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে বলেও জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।